ডাকঘর ১ 'মা"
-কি করছিস শাহেদ?
-চিঠি লিখছি
-কাকে?
-মা কে
-কতদিন পর লিখছিস?
-বহুদিন পর...
-চিঠি লিখছি
-কাকে?
-মা কে
-কতদিন পর লিখছিস?
-বহুদিন পর...
২৪ এপ্রিল, ২০১৮
মঙ্গলবার
রাত ১১.৩০ মিনিট
মা,
কেমন আছো? রাগ করে আছো? অনেকদিন পর লিখছি বলে? জানো মা, রাগলে তোমাকে অনেক সুন্দর দেখায়। একদম ছোট খুকির মতন। লক্ষী মা আমার, রাগ করে না। আমি খুব ভালো আছি। কতদিন পর লিখছি হিসেব রেখেছো? আমি কিন্তু রেখেছি। এক বছর দুই মাস সাতাশ দিন পর লিখছি। তুমি হয়ত ভাবছো তোমার সেই ছোট খোকা কত বড় হয়ে গিয়েছে। আভিমান করতে শিখেছে। কিন্তু মা বিশ্বাস করো এটা অভিমান ছিলো না। এটা একটা যুদ্ধ ছিলো। জীবনকে জয় করবার যুদ্ধ। যেখানে আমি আমার সঙ্গি হিসেবে কাওকে চাই নি। মা, আমি এখন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪র্থ বর্ষে পড়ছি। সেই সাথে চাকুরী করছি। ভালো মাইনে দেয়। ছাত্র পড়িয়ে বেশ আয় করছি। তুমি হয়ত হাসছো, বলছো.."ছেলে আমার মস্ত বড় হয়ে গিয়েছে, রোজাগার করতে শিখেছে"। কিন্তু মা, তুমি তো ভেবেছিলে তোমার এই অপদার্থ ছেলেটি কখনোই কিছু করতে পারবে না। আমি শুরু করেছি মা। তোমার ছোট্ট শাহেদ এখন আর দশজনের মতন বেকার নয়। আমি এখন নিজের রোজগারে ভাত খেতে পারি মা। বলতে পারো এটা আমার অহংকার। অহংকার তো করতেই হবে। তোমার মনে আছে মা? আমরা দু'বেলা ঠিক মতন খেতে পারতাম না। স্কুলের টাকা জোগাড়ের জন্য কত দরজায় ঘুরতে হয়েছে তোমাকে। তুমি তো ভুলতে পারো না সেসব কথা। আমার তো পড়ালেখা বন্ধই হয়ে যেত, যদি না সেলিম চাচা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন। কেমন আছেন তিনি? অনেকদিন সবার সাথে যোগাযোগ করি না।
যাই হোক, মা তুমি রাগ করে থেকে না প্লিজ। তুমি তো বলেছিলে, এমন একদিন সময় আসবে যেদিন সব শান্তিরা এসে করা নাড়বে। সময় এসেছে মা। সময় আসছে। দিন পালটে যাচ্ছে। তুমি শুধু রাগ করে থেকো না।
আর লিখব না মা। খুব ঘুম পেয়েছে। তুমি তো অনিয়ম একদমই সহ্য করো না। তোমার দোয়া সবসময় আমার জন্য রয়েছে তা আমি জানি। তা না হলে আমি আজ এই পর্যন্ত আসতে পারতাম না। আমি ভালই থাকব। শুধু একটাই অনুরোধ। মা, আমি একটা মিথ্যে কথা বলেছি। রাগলে তোমাকে সুন্দর দেখায় না। তোমার হাসিটা সারাজীবন আমার চোখে লেগে থাকবে। কতদিন তোমায় দেখি না মা। প্রযুক্তি আমাদের দূরত্বটা কমাতে পারলো না, তাই না মা? তুমি রাগ করে থেকো না প্লিজ...
ইতি
রাশেদ
চিঠিটা শেষ করে রাশেদ। দুই পৃষ্ঠার একটি চিঠি হলুদ রঙের খামে ভরে খুব যত্নে রেখে দেয় তার কাছে। প্রায় অনেকদিন পর পর মা কে চিঠি লিখে রাশেদ। কিন্তু সেই চিঠি কখনোই পৌঁছায় না মা এর কাছে। কারন দুরত্বটা যে সাত আসমানের...
No comments